ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি যা আপনাকে বৈধভাবে যানবাহন চালানোর অনুমতি দেয়। অনেকেই ভাবেন যে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে দালালের সাহায্য নিতে হবে, কিন্তু আসলে আপনি নিজেই সহজেই আবেদন করতে পারেন। আজ আমরা বিস্তারিত জানবো কীভাবে নিজে নিজে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন, কী কী ডকুমেন্ট লাগবে, কত খরচ হবে, এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
ধাপে ধাপে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া
১. প্রাথমিক শিক্ষানবিশ (লার্নার) লাইসেন্সের আবেদন:
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি লার্নার পারমিট (শিক্ষানবিশ লাইসেন্স) নিতে হবে। এটি তিন মাসের জন্য বৈধ থাকে এবং এই সময়ের মধ্যে আপনাকে চালনা দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র (কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে)
- মেডিকেল সার্টিফিকেট (সরকার অনুমোদিত ডাক্তার কর্তৃক) ডাউনলোড করুন: https://bsp.brta.gov.bd/resources/pdf/DL%20Medical%20Form.pdf
- বিদ্যুৎ বিলের কপি
আবেদন প্রক্রিয়া:
১. বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (BRTA) অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://www.brta.gov.bd) এ গিয়ে একাউন্ট রেজিষ্টার করুন (মনে রাখতে হবে অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করার সময় নিজের এনআইডি দেয় ক্রয়কৃত সিমের নাম্বার ব্যবহার করতে হবে)
2. নিবন্ধন বাটনে ক্লিক করে আপনার জন্ম তারিখ, এনআইডি, ফোন নম্বার দিয়ে নিবন্ধনে ক্লিক করুন।
3. ওটিপি আসার পর পাসওয়ার্ড সেট করে নিন।
4. এর পর বাম পাশের হোম অপশন হতে প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করে নিজের প্রোফাইল ভেরিফাই করে নিন।
5. বাম পাশের ড্রাইভিং লাইসেন্স অপশনে ক্লিক করে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন অপশনে ক্লি করুন।
3. নির্ধারিত ফি প্রদান করুন এবং জমাদানের রসিদ সংগ্রহ করুন।
4. আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি শিক্ষানবিশ লাইসেন্স প্রদান করা হবে।
- ১ম পেইজে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য ঠিক থাকলে পরবর্তী পেইজে যান
- ২য় পেইজে লাইসেন্স এর ধরণ (পেশাদার, অপেশাদার) কি কি যানবাহন লাইসেন্সে সংযুক্ত করবেন এগুলো সিলেক্ট করুন।
- ৩য় পেইজে পিতার নাম (ইংরেজী), মাতার নাম (ইংরেজী), (যদি স্বামী/স্ত্রীর থাকে তার নাম (ইংরেজী), লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, বৈবাহিক অবস্থা, জাতীয়তা, দ্বৈত নাগরিক কিনা এসব বিষয় পুরণ করুন।
- ৪র্থ পেইজে জরুরী যোগযোগের জন্য একজন ফ্যামিলি সদস্যের তথ্য সংযুক্ত করুন এবং স্থায়ী ঠিকানার বাংলা তথ্য হতে দেখে দেখে স্থায়ী ঠিকানা ইংরেজিতে পূরণ করুন। তবে বর্তমান আপনি যে ঠিকানা হতে লাইসেন্স গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ঐ ঠিকানা ব্যবহার করুন এবং কোন সার্কেল অফিস ও ভেন্যু তে পরিক্ষা দিতে ইচ্ছুক তা নিশ্চিত করুন।
- ৫ম পেইজে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, গ্যাস/বিদ্যুৎ/ওয়াসা বিল সংযুক্ত করুন (ফাইল সাইজ সবোর্চ্চ ৬০০ কেবি) এবং কার্ড কোন ঠিকানায় নিতে ইচ্ছুক তা পুরণ করুন
- এর পর সাবমিট অপশনে ক্লিক করে তথ্য যাচাই পূর্বক (বিকাশ, নগদ, রকেট, ভিসা, মাষ্টার কার্ড, নেক্সাস কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন
- পেমেন্টে সম্পন্ন হলেই আপনার লানার প্রস্তুত এটি সংরক্ষণ করুন
লার্নার লাইসেন্সের খরচ:
- মোটরসাইকেলের জন্য: ২৩০ টাকা
- হালকা যানবাহনের জন্য: ৫১৮ টাকা
- উভয়ের জন্য: ৭৪৮ টাকা
২. চূড়ান্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা
লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার তিন মাস পর আপনি চূড়ান্ত লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে পারবেন। পরীক্ষাটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়: (আপনি চাইলে অতিরিক্ত ফি প্রদানের মাধ্যমে পরিক্ষার সময় ৩ মাস হতে জরুরী ভাবে ৩,৭,১৫ দিনের মধ্যে দিতে পারবেন। তবে এতে অতিরিক্ত ফি বহন করতে হবে)
(ক) বায়ুএনরলমেন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ প্রদান
(খ) লিখিত পরীক্ষা
এই পরীক্ষায় ট্রাফিক নিয়ম-কানুন, সড়কের সাইন ও সিগন্যাল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। এটি সাধারণত BRTA অফিসে হয়ে থাকে।
(গ) মৌখিক পরীক্ষা
এই পরীক্ষায় আপনাকে রাস্তার বিভিন্ন তথ্যমূলক চিহ্ন নাম প্রশ্ন করা হবে।
(ঘ) ব্যবহারিক পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে গাড়ি চালানোর ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে। BRTA কর্তৃক অনুমোদিত প্রশিক্ষক আপনার গাড়ি চালানোর দক্ষতা যাচাই করবেন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
- লার্নার লাইসেন্সের কপি
- লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ
- নির্ধারিত ফি পরিশোধের রসিদ
- ট্রেইনিং সনদ (প্রয়োজ্য ক্ষেত্রে)
লাইসেন্স সংগ্রহ:
পরীক্ষা উর্ত্তীণ হলে আপনাকে অনলাইনে স্মার্ট কার্ড এর জন্য একটি ফি প্রদান করতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের খরচ:
- মোটরসাইকেলের জন্য: ২,৫৯০ টাকা
- হালকা যানবাহনের জন্য: ৩,৪৯০ টাকা
- উভয়ের জন্য: ৪,৩৪৫ টাকা
উপসংহার:
নিজে নিজে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা সহজ এবং কম খরচের। দালালের আশ্রয় না নিয়ে আপনি নিজেই অনলাইনে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। তাই আজই প্রস্তুতি নিন এবং বৈধভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন!